বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় নকল দুধের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। জব্দ করেছে নকল দুধ ও দুধ তৈরির বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার সকালে উপজেলার শিহিপুর মধ্যপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। সেখানে দলটি নকল দুধ তৈরির কারখানার সন্ধান পায়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নকল দুধ এবং এই দুধ তৈরিতে ব্যবহৃত সয়াবিন তেল, হোয়াইট পাউডার, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ নানা রাসায়নিক উপকরণ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজন কারিগরকে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া গ্রামের সরজিত ঘোষ, একই উপজেলার পাটুরিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবদুল হান্নান এবং সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ঘোষ পাড়ার সজীব কুমার ঘোষ।
পুলিশ আরও জানায়, কারখানাটিতে কেমিক্যাল মিশ্রিত সাদা পাউডার, মিল্ক পাউডার, গ্লুকোজ এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সঙ্গে পানি মিশিয়ে তৈরি করা হতো তরল দুধ। নকল এই দুধ গরুর খাঁটি দুধ বলে বিক্রি করা হতো খুচরা ও পাইকারি বাজারে। তরল দুধ বাজারজাতকারী বিভিন্ন কোম্পানিতেও সরবরাহ করা হতো এই নকল দুধ। দীর্ঘদিন ধরে কারখানাটিতে ভেজাল দুধ তৈরি করা হচ্ছিল বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার তিন কারিগর। তাঁরা বলেছেন, সেখানে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ লিটার দুধ তৈরি করতেন তাঁরা। দুধে ননি আনতে মেশানো হতো সয়াবিন তেল। আর বেশি দিন সংরক্ষণ করতে মেশানো হতো হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
ঘটনাটি তুলে ধরতে আজ দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই কারখানা থেকে প্রায় ১০০ লিটার নকল তরল দুধ, ১০ কেজি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ২৫ কেজি হোয়াইট পাউডার, ১০ কেজি গ্লুকোজ, ২০ লিটার সয়াবিন তেল, পাঁচটি ব্লেন্ডার মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
এসপি জানান, ওই নকল দুধের কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে। প্রধান কারবারিদের ধরতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার কারিগরেরা পুলিশকে বলেছেন, কেমিক্যালের সঙ্গে নকল দুধে অনেক সময় ফরমালিনও মেশানো হতো।
বগুড়ার সিভিল সার্জন অর্ধেন্দু দেব বলেন, রাসায়নিক মিশ্রিত এসব ভেজাল দুধ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পেটের পীড়া, ডায়রিয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর কারণে এসব দুধ খেয়ে কিডনি ও লিভার বিকল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুত্র: দৈনিক 'প্রথম আলো' নিউজ।
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment